বেলা ১১ ঘটিকায় গাড়ী পেট্রাপোল ত্যাগ করে কলকাতার পথে চলতে শুরু করলো। ৯/১০ মিনিট পর্যন্ত মোবাইলের নেটওয়ার্ক ঠিকঠাক ছিলো। এরপর উধাও। কিছু করার নেই। অতএব গ্লাসের পর্দা সরিয়ে আমরা রাস্তাঘাট(১) সম্বন্ধে ধারণা গ্রহণের চেষ্টা করলাম। পেট্রাপোল কাস্টমসে দেখেছিলাম, যশোহর সীমান্ত থেকে কলকাতা শহর মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। কিন্তু রাস্তা ছোট হবার কারণে গাড়ী শামুকের গতিতে চলছিলো।
২ ঘণ্টা পর যশোহর রোড, বনগাঁও উত্তর ২৪ পরগনার ‘হোটেল শ্যামলী বার কাম রেস্টুরেন্ট’ -এ গাড়ী দাড় করলো। কিছুটা প্রশান্তি অনুভূত হলো। কারণ সকাল থেকে নাস্তা করার চেষ্টায় আছি। কিন্তু যখনি রেস্টুরেন্টে প্রবেশের চিন্তা করি, সাথে সাথে ডাক চলে আসে। এবার অন্তত নাস্তা করতে পারবো।
‘হোটেল শ্যামলী’ মুসলিম মালিকানাধীন রেস্টুরেন্ট। আমাদের সঙ্গী সব যাত্রীই রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করলেন। আমরা হাতমুখ ধৌত করে কর্নারের একটি টেবিল দখল করে পরোটা আর মুরগির গোশত(২) দিয়ে পেট পুরে নাস্তা করলাম। যদিও খুব পাতলা, কিন্তু আকৃতির দিক দিয়ে একেকটি পরোটা আমাদের দেশের তিনটি ছোট পরোটার সাইজের হবে। আর তরকারির স্বাদ ছিলো অসাধারণ।
যাক, নাস্তা শেষে চা পান করে বেরিয়ে গাড়িতে উঠলাম। নাস্তা করতে করতে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করে জেনেছিলাম, কলকাতা পৌঁছুতে আরও ২ ঘণ্টার পথ পেরোতে হবে। জায়গা মাত্র ৮৪ কিলোমিটার হলেও এই প্রথম মনে হলো দূরে কোথাও যাচ্ছি।
রেস্টুরেন্টে ৩০ মিনিট বিরতি শেষে গাড়ী ছেড়ে দিলো। কলকাতা শহর পর্যন্ত আর কোনও বিরতি নেই। পুরোপুরি নেটওয়ার্কের বাইরে থাকার বিষয়টি বেশ পীড়া দিচ্ছিলো। ভারতীয় সিম কেনা হয়নি। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আম্মু না জানি কি ভাবছেন। এমনিতেই তিনি সবসময় চিন্তিত থাকেন।
এসব ভাবতে ভাবতে শহরের কাছাকাছি এসে জ্যামে(৩) পড়লাম। আমাদের ঢাকা শহরের মতো প্রত্যেকটি পয়েন্টে জ্যাম। বিরক্ত হচ্ছিলাম। কিন্তু কিছু করারও নেই। আমাদের ১ সিট সামনে কিউটি-বিউটি-বুদ
্ধিমতী এক শিশুকন্যা(৪) বসেছিলো। তার চমৎকার সব কথাবার্তা শুনে বিরক্ত-ভাব দূর করার চেষ্টা করলাম। পুরো গাড়ির যাত্রীদের সে মাতিয়ে রেখেছিলো। এতো জোর আওয়াজে কথা বলছিলো যে, নিথর নিস্তব্ধ গাড়িতে তার কথাই কেবল শুনা যাচ্ছিলো। সে কি করে, কি খায়, স্কুল কেন ভালো লাগে না, তার আব্বু কেন এই শার্ট পরলো এইসব হাবিজাবি কথা বলছিলো।
শিশুকন্যার কথা শুনতে শুনতেই খেয়াল করলাম আমরা কলকাতার শিয়ালদা রেলওয়ে স্টেশনের কাছে পৌঁছে গেছি। বুঝতে পারলাম, গন্তব্যে পৌঁছুতে আর বেশিক্ষণ লাগবে না। শিয়ালদা রেলওয়ে স্টেশন থেকে কলকাতা নিউ মার্কেট –এর দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। যানজট পেরিয়ে আধঘণ্টার মধ্যে নিউ মার্কেট এলাকায় পৌঁছে গেলাম। ঘড়ির কাটায় তখন বিকেল ৪ –টা। গাড়ী থেকে নেমে ব্যাগেজ সংগ্রহ করে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। এবার পছন্দমতো হোটেল নির্বাচন করার পালা। চলবে…….
========== ========== ========== ==========
ভ্রমণ পরামর্শ ৬>>>
মোবাইলের সহজলভ্য ব্যবহার মানসিকভাবে মানুষকে দুর্বল বানিয়ে দিয়েছে। চিঠিপত্রের যুগে এই ঝামেলা অন্তত ছিলো না। এখন স্বল্প সময় মোবাইল বন্ধ থাকলে আপনজনেরা কতোরকম দুশ্চিন্তা যে করেন!!! ভ্রমণকালে বিভিন্ন কারণে নিয়মিত যোগাযোগ বাঁধাগ্রস্ত হতে পারে। এরূপ পরিস্থিতিতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার সম্ভাব্য সময় আগেভাগে পরিবারে জানিয়ে দিলে দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা সহজ হয়।
***ভ্রমণ কাহিনী লেখায় আপাতত স্বল্পকালীন একটা বিরতি দিচ্ছি। ফিরে আসছি কদিন পর। সাথে থাকুন সেই পর্যন্ত।
