>কলকাতা ভ্রমণ< জুজুর ভয় ও ভিন্ন অভিজ্ঞতা > (পঞ্চম পর্ব)

ভারতীয় ইমিগ্রেশন অফিসের বাইরে ১০ মিনিট অপেক্ষার পর ভিতরে যাওয়ার ডাক আসলো। একসাথে ১০/১৫ জন প্রবেশ করলাম। অনেকগুলো ডেস্ক এবং একেবারে ঝামেলা নেই দেখে বেশ ভালো লাগলো। ২/১ জন দাঁড়িয়ে আছে এমন একটি বুথের সামনে দাঁড়িয়ে পড়তেই ৪/৫ মিনিটের মধ্যে সিরিয়াল চলে আসলো। ডেস্কে বসা ইমিগ্রেশন অফিসার পাসপোর্ট হাতে নিয়ে নাম জানতে চেয়ে কোথায় যাবো জিজ্ঞেস করলো। উত্তর দিতেই ওয়েব ক্যামে ছবি তুলে Arrival/আগমনী সীল(১) মেরে দিলো।
এটুকু কাজে ২ মিনিটও লাগলো না। অথচ ভেবেছিলাম, না জানি কতো ঝামেলা করবে! নানারকম হয়রানীমূলক প্রশ্ন দূরে থাক, সাথে টাকা কতো রয়েছে, এই সাধারণ প্রশ্নটিও জিজ্ঞেস করলো না!
ইমিগ্রেশন ডেস্কের বাইরে এক অফিসার দাড়িয়ে ছিলো। লাইন ছেড়ে বেরিয়ে আসতেই আমাকে ইশারায় বললো, ‘ইধর জাইয়ে’। আমিও লাইনের দিকে ইঙ্গিত করে বললাম ‘মেরা এক সাথী ওহা হ্যাঁয়’। হেঁসে হেঁসে চেয়ার দেখিয়ে বললো, ‘ঠিক হ্যাঁয়। ইধর বইঠিয়ে আওর সাথী কো হাতী বানাকে লে যাইয়ে’। যাক, ২/১ মিনিটের মাঝে ভ্রমণসঙ্গী চলে আসতেই বেরিয়ে পড়লাম।
বাইরে এসে বিশাল লম্বা লাইন দেখে তো অবাক। ভাবলাম, চেকআপ হবে। কিছুটা হতাশ হলাম। এই লাইন পেরোতে কতক্ষণ লাগে, এসব ভাবতে গিয়ে মন খারাপ হয়ে গেলো। কিন্তু লাইনে দাড়িয়ে পড়তেই কাপড়ে গ্রীন লাইনের স্টিকার দেখে একজন বললো, আপনারা গ্রীন লাইনের যাত্রী না? এখানে দাড়িয়ে আছেন কেন! এই লাইন আপনাদের জন্য নয়। ওইদিকে যান। লোকটির কথা শুনে ভীষণ স্বস্তি-বোধ করলাম এবং তৎক্ষণাৎ এগিয়ে গেলাম। গেইটেই কাছে পৌঁছুতেই গ্রীন লাইনের এক কর্মচারী আমাদের নিয়ে তাদের কাউন্টারের দিকে রওয়ানা দিলো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কাউন্টারে পৌঁছে দেখলাম, আমাদের ব্যাগেজ নিয়ে ২৬ নাম্বার কুলি দাড়িয়ে আছে।
কাউন্টারের মানি একচেঞ্জ বুথে টাকা পরিবর্তন করে রুপি বানিয়ে টিকিটের মূল্য বাবত ২৮০ রুপি প্রদান করে কলকাতাগামী টিকিট ক্রয় করা হলো। ইচ্ছে ছিলো নাস্তা করবো। পাশাপাশি ভারতীয় সিম কেনার খেয়ালও ছিলো। কিন্তু যাত্রী পূর্ণ হয়ে যাওয়াতে গাড়ী ছেড়ে দিবে। তাই নাস্তা ও সিম ক্রয়ের চিন্তা ঝেড়ে ফেলে গাড়িতে(২) বসে পড়লাম। কিন্তু গাড়ী খুব একটা পছন্দ হলো না। কারণ বাংলাদেশে গ্রীন লাইন পরিবহণের গাড়িগুলো ভলভো/স্ক্যানিয়া/ম্যান ব্র্যান্ডের হয়ে থাকে। আর এসব ব্র্যান্ডের বাসগুলোর সিট যথেষ্ট আরামদায়ক। কিন্তু আমাদের কলকাতাগামী বাহন নামে ‘গ্রীন লাইন পরিবহণ’ হলেও দেখে মনে হলো, টাটা কোম্পানির বাস। আবার সিটও(৩) খুব একটা সুবিধাজনক নয়।
সফরের শুরুতে ব্লগীয় ভাই-বেরাদরদের কাছে জেনেছিলাম, পেট্রাপোল থেকে গাড়ী ছাড়তে বিলম্ব হয়। কখনো কখনো নাকি ২/৩ ঘণ্টাও অপেক্ষা করা লাগে। অথচ আমরা নাস্তা করার সময় পেলাম না। আবার অনেকে বলেছিলো, বর্ডারে ডলার/টাকা –এর মূল্য কম দেয়া হয়। অথচ সেদিন পেট্রাপোলে ডলার –এর মূল্য ছিলো ১ ডলার =৮২ রুপি। কলকাতায় পৌঁছে দেখি সেখানে চলছে ১ ডলার = ৮০ রুপি। জানি না মানুষ বাড়িয়ে বলে নাকি আমাদের ভাগ্য সেদিন চমকে গিয়েছিলো!
যাক, গাড়ী যখন কলকাতা শহরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো, ঘড়ির কাটায় বেলা ১১ –টা। অর্থাৎ ভারতে ইমিগ্রেশন থেকে শুরু করে সব কাজ মাত্র ২৫ মিনিটে শেষ! জানি, অনেকের কাছেই বিষয়টি অবিশ্বাস্য ঠেকবে!!! চলবে…….
========== ========== ========== ==========
ভ্রমণ পরামর্শ ৫>>> (১)আত্মবিশ্বাস মানুষের অন্যতম শক্তি। যেকোনো পরিস্থিতিতে আত্মবিশ্বাস বহাল থাকলে অনেক কিছু সহজ হয়ে যায়। (২)দক্ষিণ এশিয়ান রাষ্ট্র ভ্রমণের ক্ষেত্রে ডলার/টাকা এর মূল্য সম্পর্কে আগেভাগে জেনে নিতে পারলে ভালো। নতুবা প্রতারণার শিকার হবার বেশ সম্ভাবনা থাকে।
>>>১ম, ২্‌য়, ৩য় ও ৪র্থ পর্ব পড়তে প্রথম মন্তব্যের ঘরে থাকা লিংকে ক্লিক করুন।

About the Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like these