বেনাপোলের উদ্দেশ্যে রাত ১০:৩০ -এ রাজারবাগ হতে গাড়ী ছাড়ার কথা ছিলো। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট পর গাড়ী কাউন্টারে আসলো। আমরা উঠার পর ১১:০০ বাজতে গাড়ী ছেড়ে দিলো।
গাড়িতে ঘুমানোর অভ্যাস আমার অনেক পুরনো। একবার তো প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার জায়গা এক-ঘুমে চলে আসছি! পথিমধ্যে ২ বার যাত্রা বিরতিতে অনেক ডাকাডাকি করেও তোলা যায়নি! আমার ধারণা, এই অভ্যাসের কারণে ভ্রমণে ক্লান্তি, দুর্বলতা অন্যদের চাইতে কমই অনুভূত হয়।
গাড়ী ছেড়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘণ্টা তিনেক পর নিদ্রাভঙ্গ হলে দেখলাম, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় জ্যামে আটকে আছি। যেহেতু ঘুমের চাহিদা ছিলো না, আইপ্যাড নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। গাড়ী ধীরগতিতে সামনে এগুচ্ছিলো। রাত ৩:৪৫ –এর দিকে ফেরিতে উঠলো। অনেকে গাড়ী থেকে নামছিলো দেখে আমিও নেমে পড়লাম। কিন্তু সুবিশাল ফেরিতে অজস্র মানুষের হাঁটাচলা দেখে কয়েক মিনিট পর গাড়িতে চলে আসলাম। সাঁতার জানি না বলে নদী,সাগরে চলতে এমনিতেই ভয় করে। আর রাত ৪ ঘটিকায় সুবিশাল ফেরির অন্ধকার পরিবেশে অপরিচিত মানুষদের মাঝে ভয়ের মাত্রা অধিক হওয়াটা তো অতি স্বাভাবিক।
নদী পার হয়ে গাড়ী দ্রুত চলতে শুরু করলো। ভোরের আলোতে দেখলাম, যশোহর পৌঁছে গেছি। সকাল ০৭:০০ ঘটিকায় একটি পেট্রোল পাম্পে গাড়ী দাড় করালো। পাশেই ছিলো রেস্টুরেন্ট। অল্পস্বল্প নাস্তা ও চা পান করে বেরিয়ে পড়লাম। এবারের গন্তব্য বেনাপোল বর্ডার।
রেস্টুরেন্টে বেশ মজা হলো। এক পরিবারের ৪ সদস্য চিকিৎসার জন্য চেন্নাই যাবেন। আমাদের সামনের সিটে বসেছিলেন। আমি ওয়াশরুমে ফ্রেস হচ্ছিলাম, এমতাবস্থায় এদের একজন এসে বললেন, Where Are You From? বললাম, সিলেটে থাকি। বেচারা হতভম্ব হয়ে বললো, আপনি বাংলাদেশী! আমি ভেবেছি…… এরপর কলকাতায় যাওয়ার পথে আরও কয়েকবার লোকটার সাথে আলাপ হয়েছিলো
০৮:১৫ বাজতেই গাড়ী বেনাপোল স্থল বন্দরে(১) পৌঁছে গেলো। এরমধ্যে যাত্রীদের ট্র্যাভেল ট্যাক্স বাবত ৫০০ টাকা সুপারভাইজার সংগ্রহ করে নিয়েছিলো। তাকিয়ে দেখলাম, একমাত্র আমরাই সোনালি ব্যাংকে ট্র্যাভেল ট্যাক্স দিয়ে এসেছি।
বাস থেকে নামার সময় কলকাতাগামি বাসে চড়ার প্রমাণস্বরূপ সবার শরীরে গ্রীন লাইনের স্টিকার(২) লাগিয়ে দিলো। লাগেজ-পত্র সুপারভাইজারের দায়িত্বে রেখে সবাই গ্রীন লাইন কাউন্টারে গিয়ে বসলাম। যাত্রীদের ট্র্যাভেল ট্যাক্স দেয়ার কাজ চলছিলো। পাশাপাশি কাউন্টারে ডিপার্চার/বহির্গমন(৩) কার্ড পূরণ করে দিচ্ছিলো। আমাদের কোনো কাজ ছিলো না বলে নাস্তা করার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু সময় স্বল্পতায় সম্ভব হলো না।
আধঘণ্টা বসে থাকার পর সবাইকে ইমিগ্রেশনে যাওয়ার জন্য বললো। যাত্রীরা দলবেঁধে গ্রীন লাইনের কর্মচারীদের পিছু পিছু রওয়ানা দিলাম। ২/১ মিনিট হাঁটতেই কাস্টমস-ইমিগ্রেশন-চেকপোস্ট –এ চলে আসলাম। প্রচুর মানুষ ছিলো। সবাই কাস্টমস(৪) –এর বাইরে সবাই লাইন ধরে দাড়িয়ে রইলাম। ২০ মিনিটের পর ভেতরে যাওয়ার ডাক আসলো। ওদিকে আমাদের ডিপার্চার কার্ড তখনো পূরণ করা হয়নি। সুপারভাইজারকে বলতেই ইমিগ্রেশনে থাকা একব্যক্তি কিছুক্ষণের মধ্যে পূরণ করে দিলো। এই সময়কে কাজে লাগিয়ে আমি কিছুটা ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
চলবে…….
========== ========== ========== ==========
ভ্রমণ পরামর্শ ৩>>> সাধারণত লম্বা জার্নিতে মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তবে একটু চেষ্টা করলেই নিজেকে সতেজ রেখে ভ্রমণ উপভোগ করা সম্ভব। নিদ্রাহীনতা শারীরিক অস্বস্তির অন্যতম কারণ। বেশ কয়েকজন বড় মানুষের সাথে ভ্রমণের সৌভাগ্য হয়েছে। দেখেছি, কিভাবে তারা সময়কে কাজে লাগিয়ে সব কাজ ঠিকমতো আঞ্জাম দিচ্ছেন। আমার মতে কোনোরূপ ব্যস্ততা আর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা না থাকলে দূরের জার্নিতে গাড়িতে ঘুমিয়ে নেয়া ভালো। এতে ক্লান্তি-ভাব অনেকটা কমে যায়। ফলে যাত্রা পরবর্তী কাজকর্ম সহজে আদায় করা সম্ভব হয়। নতুবা দীর্ঘ ভ্রমণ ক্লান্তির প্রভাবমুক্ত হতে অনেক সময় চলে যায়। ফলে কাজকর্মে নিশ্চিতরূপে ব্যাঘাত ঘটে।
>>>প্রথম ও ২য় পর্ব পড়তে মন্তব্যের ঘরে থাকা লিংকে ক্লিক করুন।
