>কলকাতা ভ্রমণ< ভিসা পাওয়া না পাওয়ার দিনগুলো > (প্রথম পর্ব)

অদেখা অজানা জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর অভ্যাস অনেক পুরনো। কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, টেকনাফ থেকে শুরু করে উল্লেখযোগ্য অনেকগুলো জায়গা দেখা হয়েছে। ছোটখাটো একটা ভ্রমণ গ্রুপ আছে আমাদের। সময় সুযোগে দলবেঁধে সবাই বেরিয়ে পড়ি।
আজ থেকে প্রায় দেড় বছর পূর্বে আমরা ৭ জন ভারত ও নেপাল ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছিলাম। দীর্ঘ এক সফর। সিলেট তামাবিল বর্ডার হয়ে শিলং, গুহাটি গিয়ে শিলিগুড়ি, দার্জিলিং ভ্রমণ করে নেপাল। অন্তত ৯/১০ দিন তো হবেই।
কুরবানি ঈদের ছুটিতে বেড়াতে যাবো। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। আমি ব্যতীত সবার পাসপোর্টে নেপালের ভিসা লাগানো হয়ে গেছে। আমার উদ্ভট চিন্তা-ভাবনার কারণে নেপালের ভিসা লাগানো সম্ভব হয়নি। যদিও শেষপর্যন্ত ভিসা না লাগানোর কারণে উপকারই হয়েছিলো।
আমার পুরনো হাতে লেখা পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিলো। ভেবেছিলাম রিনিউ করে নেবো। তখন মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট দেয়া শুরু হয়েছে মাত্র। শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলে ফেললাম। রিনিউ না করে নতুন পাসপোর্ট তৈরির সিদ্ধান্ত নিলাম। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ আর বদলের ঝামেলায় পাসপোর্ট হাতে আসতে দেরি হলো। ফলে ট্র্যাভেল –এ সবার শেষে পাসপোর্ট জমা দিলাম।
প্রথমে সবাই ভেবেছিলাম, নেপালের ভিসার মতো ভারতীয় ভিসাও ঘরে বসে পেয়ে যাবো। কিন্তু শেষমুহুর্তে পাসপোর্ট জমা দিতে চিটাগাং যেতে হয়েছিলো। খুব খারাপ লাগেনি। রাতে দলবেঁধে গল্প করতে করতে ট্রেনে করে চিটাগাং গেছি। পরদিন খুলশী এলাকায় ভারতীয় দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দিয়ে ঐতিহ্যবাহী আন্দরকিল্লা মসজিদে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে রাতে সিলেটে চলে এসেছি।
আমরা ভেবেছিলাম ভিসা তো হয়েই যাবে। উল্লেখযোগ্য কারণ, নেপালের ভিসা লাগানো ছিলো। ভিসা প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও সাথে ছিলো। কিন্তু ওই সময় পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় বোমা বিস্ফোরণের কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। ২/১ দিনের মাঝে যেখানে পাসপোর্ট ফেরত দেবার কথা, সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সেই পাসপোর্ট ফেরত আসে না। যতো দিন যায়, আমাদের দুশ্চিন্তা বাড়ে। কি হয় না হয়!
হতাশার সাগরে নিমজ্জিত আমরা একদিন নারায়ণগঞ্জে বেড়াতে যাই। সেখানকার পানাম সিটিতে থাকাবস্থায় ২ জনের মোবাইলে ভারতীয় দূতাবাস থেকে ফোন আসে। পরদিন তাঁদেরকে সরাসরি দেখা করতে বলা হয়। যেহেতু পাসপোর্ট আটকে আছে, বাধ্য হয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে তৎক্ষণাৎ ৩ সাথীকে চিটাগাং যেতে হয়। আমরা আরও হতাশ হয়ে সিলেটে ফিরে আসি।
পরদিন সাক্ষাতকার শেষে কিছু না বলে তাদের বিদায় দিয়ে দেয়। এরপর আরও কয়েকদিন অতিবাহিত হবার পর ভিসা না দিয়েই পাসপোর্ট ফেরত দেয়। ভারতীয় ভিসা নেই, সরাসরি নেপাল যাবো না। অতএব পুরো ট্যুর প্ল্যান বাতিল। সবার মন একেবারে বিধ্বস্ত।
অনেকদিন পর…… Misbah Monjur ভাই লাইট হাউজ ট্র্যাভেল –এর কাইয়্যুম ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। প্রথমে সহপাঠী Tufayel Ahmed পাসপোর্ট জমা দিলে মাস-খানেকের ভেতরে ভিসা হয়ে গেলো। এবার আমার পালা। কিন্তু আমার পাসপোর্ট আবার অন্য ট্র্যাভেল –এ ওমরাহ্‌ ভিসা -এর জন্য ফেলে রাখা। আনবো আনছি করতে করতে গেলো কিছুদিন। অতঃপর সত্যিই একদিন পাসপোর্ট ফেরত এনে কাইয়্যুম ভাইকে দিলাম। বেশ কিছুদিন পর তিনি এস্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া সিলেট ব্রাঞ্চে পাসপোর্ট জমা দেয়ার জন্য ই টোকেন সংগ্রহ করে দিলে ৩ জানুয়ারি পাসপোর্ট জমা দিলাম। ১৫ দিন পর ভিসা সহ পাসপোর্ট ফেরত আসলো। চলবে…….
========== ========== ========== ==========
ভ্রমণ পরামর্শ ১>>> ভারতীয় ট্র্যাভেল ভিসার জন্য যা প্রয়োজন> (১)পাসপোর্ট ও পাসপোর্ট –এর ফটোকপি। (২)ভিসার আবেদন পত্র বা ইটোকেন। (৩)জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি। (৪)আবাসিক ঠিকানা প্রমাণের জন্য বিদ্যুৎ বিল/পানি বিল/গ্যাস বিল/টেলিফোন বিলের মূল কপি ও ফটোকপি। (৫)আর্থিক সঙ্গতি প্রমাণের জন্য নুন্যতম ১৫০ ডলার এন্ডোজ এর কাগজপত্র অথবা ব্যাংকের হিসাবের বিবরণীর মূল কপি। (৬)পেশা প্রমাণের জন্য ব্যবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্স/চাকুরীজীবী হলে চাকুরিদাতার নিকট হতে চিঠি। (৭) ২×২ সাইজের ২ কপি ছবি।

About the Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like these